রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে দায় স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মারাত্মক ভুল করেছে সংস্থাটি। সমন্বিত পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা পরিষদে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ার কারণেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে-উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই জাতিসংঘ এই ইস্যুতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এদিকে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে সোমবার ইয়াঙ্গুনে সমাবেশ করেছে মিয়ানমারের কট্টর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্ত্বেও সোমবার মিয়ানমারের কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংগঠন ‘মা বা থা’কে অর্থ-সহায়তা দেয় দেশটির সামরিক বাহিনী।
‘বৌদ্ধ ধর্ম পুরোহিত ফাউন্ডেশন’-এর বার্ষিক সমাবেশে রোহিঙ্গাদের বিদেশি আখ্যা দেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবি- বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। আর এ জন্য দেশটির নেত্রী অং সান সু চিকেও দায়ী করেন তারা। সু চির সমালোচনার পাশাপাশি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডিকে ভোট না দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
মূলত রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা ও নির্যাতনের জেরেই ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ধর্মীয় উস্কানির দায়ে ২০১৭ সালে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করে মিয়ানমার সরকার।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করলেও এবার খোদ সংকটের সমাধান না হওয়ায় নিজেদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে জাতিসংঘ। গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘদূত গার্ট রোজেন্টের লেখা ৩৪ পৃষ্ঠার এক ইন্টারনাল রিভিউতে বলা হয়েছে-রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মারাত্মক ভুল করেছে জাতিসংঘ।
সমন্বিত পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা পরিষদে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ার কারণেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আর এ কারণেই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে পারেনি সংস্থাটি। জাতিসংঘের ওই ভুলকে পরিকল্পিত ব্যর্থতা হিসেবেও তিনি আখ্যা দেন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে সংস্থাটি কোন ধরনের অবস্থান নেবে, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।